

সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফের কচ্ছপিয়া উপকুল দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের ঘটনায় প্রশাসনিক অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে আইন শৃংখলা বাহিনী ওই এলাকায় দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করেন। কোষ্টগার্ড, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে উপকুলের কচ্ছপিয়া এলাকার গহীন জঙ্গলে পাচারকারীদের আস্তনায় অভিযান চালিয়ে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়া হয়। তাদের বন্দিশালা থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা নারী-পুরুষ শিশুসহ দেড় শতাধিক ভিকটিম উদ্ধার করেন যৌথ বাহিনী। উদ্ধারকৃত ভিকটিমের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী এবং শিশু রয়েছেন। এদের সিংহভাগই রোহিঙ্গা। তারা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন বিয়ে এবং পরিবারের কাছে। কচ্ছপিয়া উপকুলের মানবপাচারকারীদের আস্তনা এবং দুর্গম পাহাড়ের বন্দিশালায় দফায় দফায় অভিযানে মানবপাচারকারীরা অনেকটা নড়েচড়ে বসেন।
তারা মানবপাচারের ঘাট পরিবর্তন করে অনতিদূরের করাচিপাড়া নৌকা ঘাটকে টার্গেট করেছেন বলে সুত্রে জানাগেছে। সপ্তাহ যেতে না যেতেই মানবপাচারে জড়িত অসাধু চক্র পাচারের রুট পরিবর্তন করেছেন। এবার তারা কচ্ছপিয়া ঘাট পরিবর্তন করে করাচিপাড়া ঘাটকে পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়।
গত ১ অক্টোবর রাতে বাহারছড়ার উপকুলের করাচিপাড়া ঘাট দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা পাচারকারীদের বন্দিশালা থেকে যৌথ বাহিনী নারী ও শিশুসহ ২১জন ভিকটিমকে উদ্ধার করেন। স্থানীয়রা জানায়, মানবপাচারকারী শাহজাহানের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে উল্লেখিত ভিকটিমদের উদ্ধার করা হয়। যাদের ওই ঘাট দিয়ে সাগরপথে পাচার করার জন্য জড়ো করা হয়েছিল।
উপকুলের করাচি পাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, করাচিপাড়া নৌ ঘাটে অন্তত ২ডজন ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে জানাগেছে। স্থানীয় দেওয়া প্রাপ্ত তথ্য মতে করাচি পাড়া নৌ ঘাটের নৌকার মালিক এবং তাদের স্বজনরাই আদম ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদম ব্যবসায় জড়িতদের তথ্য মতে, ৮০-১০০জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন উপরোক্ত নৌকা সাগরপথে মানবপাচারে ব্যবহার করা হয়। কাঠের তৈরী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে গভীর সমুদ্রে সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি অদুরে সুমদ্রে অবস্থানরত ট্রলারে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়।
করাচিপাড়ার লোকজনের সাথে কথা জানাগেছে, স্থানীয় শীর্ষ মানবপাচারকারী মুজিবুল্লাহ, জয়নাল, শহিদ ও আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে করাচিপাড়া নৌ-ঘাট পরিচালিত হয়। স্থানীয়দের দাবী কচ্ছপিয়া এলাকার আব্দুর রশিদের পুত্র স্থানীয় মহিলা মেম্বারের জামাতা মানবপাচারের গডফাদার আব্দুল গফুরের নিয়ন্ত্রণাধীন করাচিপাড়া আদমঘাটও। সুত্র জানায়, গত মাসে করাচিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচারের অন্যতম হোতা নুর মোহাম্মদ, তার স্ত্রী খুরশিদা ছেলে নুরুল আবছারকে বেশ কিছু সংখ্যক ভিকটিমসহ আটক করে যৌথ বাহিনী। মানবপাচার মামলায় করাচিপাড়া কেন্দ্রীক অন্যতম গডফাদার নুর মোহাম্মদ স্ত্রী ছেলেসহ কারান্তরীণ হলেও সিন্ডিকেটের অপরাপর সদস্যদের মাধ্যমে সাগরপথে মানবপাচার আগের মতই অব্যাহত রেখেছেন বলে জানাগেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, করাচিপাড়া এলাকার শীর্ষ মানবপাচারকারী মৃত ইদ্রিছ মিয়া ও নুর জাহানের পুত্র আহমদ কবির, নুরুল ইসলাম ও শ্যামল খাতুনের পুত্র নুর মোহাম্মদ(৪০), বশির আহমদ ও রশিদা খাতুন মেয়ে নুর মোহাম্মদের স্ত্রী খুরশিদা বেগম(৩৮), নুর মোহাম্মদ ও খুরশিদা বেগমের পুত্র নুরুল আবছার(১৯), একই এলাকার মো: হোছাইন ও ফাতেমা খাতুনের পুত্র মো: ইমরান(২৮), বশির আহমদ ও রশিদা বেগমের পুত্র মুজিবুল্লাহ(৩০), জাফর আহমদের পুত্র জয়নাল(২১), আব্দুর রহিম ও সারা খাতুনের পুত্র ইউসুফ মিয়া(১৮), মৃত সোনা মিয়া ও মৃত জরিনা খাতুনের পুত্র আব্দু রহিম(৪৬),নবী হোসাইন ও পুত্র হামিদ উল্লাহ(২২), মৃত চাঁন্দ মিয়া ও জরিনা খাতুনের পুত্র শাহজাহান(২৫), ওমর আকবর(৫৫), তার পুত্র রশিদ মিয়া(২১),মৃত ওসমান গণি ও হাকিমুন্নিছার পুত্র আলী আকবর(৪৮), তার পুত্র গফুর মিয়া(২৩), আব্দুল জাব্বারের পুত্র ছেবর মিয়া(২৫), ওমর ফারুক(২০),নুরুল কবির ও নুর বানুর পুত্র হেলাল উদ্দিন(২৫), বেলাল উদ্দিন(২৪), মৌলভী নুর মোহাম্মদ ও সনজিদার পুত্র মো: শহিদ(২১) করাচিপাড়া ঘাট দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করেন। উল্লেখিত ব্যাক্তিদের কম বেশীই মানবপাচার মামলার আসামী। উপকুলের করাচিপাড়ায় কারা মানবপাচারকারী? তাতো আয়নার মতোই স্পষ্ট। তবুও তারা (চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা) দিবারাত্রি এলাকায় ঘুরাফেরা করছেন।
সাগরপথে মানবপাচারে জড়িতদের ডাটাবেইস তৈরীর মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এদেরকে আইনের আওতায় আনতে হলে যৌথ অভিযান অব্যাহত রাখার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
উপকুলের মানবপাচারকারীরা কেমনে প্রকাশ্যে ঘুরছেন? এলাকায় থেকে সাগরপথে অবৈধভাবে মানব পাচারও করছেন? এসব বিষয়ে জানতে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার রিং করা হয়। পাশাপাশি ওয়াটসআপে তাঁকে ক্ষুদে বার্তাও পাঠানো হয়। তিনি রেসপন্স না করায় উপরোক্ত বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কোষ্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে: কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, সাগরপথে অবৈধভাবে মানবপাচার বন্ধে কোষ্টগার্ড বদ্ধ পরিকর। পাচারে জড়িতদের ধরতে কোষ্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।##

পাঠকের মতামত